মনে করি পৃথিবীর ভর = M, ব্যাসার্ধ = R এবং ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত কোন বস্তুর ভর = m [চিত্র ৭.৯]। উক্ত বস্তুকে পৃথিবী যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে তার মান,
(21)
পর্যবেক্ষণ স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান g হলে বস্তুর ওজন,
(22)
এখন সমীকরণ (21) ও (22) হতে পাই,
বা,
বা, (23)
সমীকরণ (23)-এ, g = 9.8 ms-2, R = 6.37 × 106 m, G = 6.673 x 10-11 Nm-2kg-2 বসিয়ে,
মনে করি পৃথিবীর গড় ঘনত্ব =
ভর/আয়তন =
=5.5 x 103 kg m-3|
একে সাধারণত ‘M’ বা 'm' দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি একটি স্কেলার রাশি। বস্তুর ভর স্থান নিরপেক্ষ অর্থাৎ যে কোন স্থানে নেয়া হোক না কেন এর মান সর্বত্র স্থির থাকবে। বস্তুর ভর তার স্থিতি, গতি, তাপমাত্রা, চুম্বকত্ব বা তড়িতাবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। সেজন্য ভর বস্তুর একটি স্বাভাবিক ধর্ম। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে যে কোন বস্তুর বেগ যদি আলোর বেগের কাছাকাছি হয় তা হলে বস্তুর ভরের পরিবর্তন দেখা যায়। বেগের সঙ্গে বস্তুর ভর পরিবর্তনের তত্ত্ব আইনস্টাইন (Einstein)-এর আপেক্ষিক তত্ত্বে (Theory of relativity) বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
একে W দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু ওজন একটি বল ছাড়া আর কিছুই নয়, সুতরাং এটি একটি ভেক্টর রাশি এবং এর মান, w = ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ
বা, W = mg (25)
বিভিন্ন স্থানে g-এর মান বিভিন্ন বলে স্থানভেদে বস্তুর ওজন পরিবর্তিত হয়। অতএব বস্তুর ওজন স্থান নিরপেক্ষ নয়। এই প্রসংগে আরও বলা যায় যে, বস্তুর ওজন তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য নয়। বস্তুর ওজন থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। যেমন পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর কোন ওজন নেই।
আমরা জানি, ওজন W = mg ;
এখানে m = বস্তুর ভর এবং g =অভিকর্ষজ ত্বরণ।
বস্তুর ভর একটি ধ্রুব রাশি; সুতরাং কোন বস্তুর ওজন অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর নির্ভরশীল। যে স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ বেশি, সে স্থানে বস্তুর ওজনও বেশি। আর অভিকর্ষজ ত্বরণ যে স্থানে কম বস্তুর ওজনও সে স্থানে কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মেরু অঞ্চলে অভিকর্ষজ ত্বরণ বেশি। সুতরাং মেরু অঞ্চলে বস্তুর ওজন বেশি। বিষুব অঞ্চলে অভিকর্ষজ ত্বরণ কম। অতএব বিষুব অঞ্চলে বস্তুর ওজনও কম। পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণ শূন্য। অতএব পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর কোন ওজন নেই।
মহাকর্ষীয় ধ্রুবক | অভিকর্ষজ ত্বরণ |
---|---|
১। একক ভরবিশিষ্ট দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী দূরত্ব এক একক হলে তাদেঁর পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে। | ১। অভিকর্ষ বলের জন্য বস্তুতে যে ত্বরণ সৃষ্টি হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। |
২। এর মাত্রা সমীকরণ | ২। এর মাত্রা সমীকরণ |
৩। একটি বিশ্বজনীন ধ্রুবক । | ৩। এটি একটি পরিবর্তনশীল রাশি। |
৪। এস. আই. পদ্ধতিতে এর মান 6.657 x 10-11 Nm2kg-2 | ৪। এস.আই.পদ্ধতিতে এর মান ভূ-পৃষ্ঠে 9.81 ms-2 |
৫। এর মান বস্তুর ভরের উপর বা ভূ-কেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে | ৫। এর মান বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না, কিন্তু দূরত্বের উপর নির্ভর করে না । |
৬। এটি একটি স্কেলার রাশি। | ৬। এটি একটি ভেক্টর রাশি |
আমরা জানি, কোন একটি বস্তু যে পরিমাণ বল দ্বারা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়, তাকে বস্তুর ওজন বা ভার বলে।
মনে করি A একটি দৃঢ় বস্তু। তা কতকগুলো বস্তুকণার সমষ্টি। প্রতিটি কণাই অভিকর্ষ বল দ্বারা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৰ্ষিত হবে। এই সব বল মিলিত হয়ে একটি লব্ধি বল সৃষ্টি করবে। বস্তুটিকে ঘুরে ফিরে যেভাবেই রাখা হোক না কেন কণাগুলোর উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বলের পরিমাণ, অভিমুখ ও ক্রিয়াবিন্দুর এবং সেই সঙ্গে ঐ বলগুলোর লন্দির পরিমাণ, অতিমুখ ও ক্রিয়াবিন্দুর কোন পরিবর্তন হবে না। এই লব্ধি বলই বস্তুর ওজন। [চিত্র ৭.১০]-এ ওজন বা বল বস্তুর 'G' বিন্দুর মধ্য দিয়ে ক্রিয়া করছে। এই বিন্দুই বস্তুটির অভিকর্ষ কেন্দ্র বা ভারকেন্দ্র।
আমরা জানি একটি বস্তু অনেকগুলো বস্তুকণার সমষ্টি। বস্তুর কণাগুলোর সমস্ত ভরকে একটি মাত্র বিন্দুতে কেন্দ্ৰীভূত মনে করলে ঐ বিন্দুর মধ্য দিয়েই সমস্ত কণার উপর তাদের ভরের সমানুপাতিক ক্রিয়ারত সমান্তরাল বলসমূহের লন্ধি ক্রিয়া করে বলে বিবেচিত হয়। ঐ বিন্দুকে বস্তুর ভরকেন্দ্র বলে।
মনে করি : A একটি বস্তু। তা অনেকগুলো বস্তুকণার সমষ্টি। ধরি বস্তুকণাগুলোর ভর যথাক্রমে ,m1, m2, m3,……………. mn ইত্যাদি [চিত্র ৭.১১] সমস্ত ভরকে C বিন্দুতে সমবেত ধরা হলে ঐ ভরগুলোর উপর ক্লিয়ারত কণার ভরের সমানুপাতিক সমান্তরাল বলের লব্ধি C বিন্দুর মধ্য দিয়েই ক্রিয়া করবে। এই বিন্দুর নামই ভরকেন্দ্র।
মনে করি A একটি বস্তু। এতে m1, m2, m3…….mn ভরবিশিষ্ট বস্তুকণা আছে। ধরি OX এবং OY সমকোণে অবস্থিত দুটি অক্ষ। এই অক্ষ দুটির সাপেক্ষে ধরি তাদের স্থানাংক যথাক্রমে (x1,y1 ), (x2 + y2), (x3, y3), (xn, yn) ইত্যাদি। মনে করি এদের ভারকেন্দ্র G বিন্দুতে অবস্থিত এবং এর স্থানাক () যেহেতু অবস্থিতির সঙ্গে ভারকেন্দ্রের রদ বদল হয় না, সেহেতু তলটি অনুভূমিক ধরা যেতে পারে। অতএব বস্তুকণাগুলোর ভার সমমুখী সমান্তরাল বল হবে এবং তারা উল্লম্বভাবে নিচের দিকে ক্রিয়া করবে। সংজ্ঞানুসারে G বিন্দুর মধ্য দিয়ে মোট ভার বা ওজন নিচের দিকে ক্রিয়া করবে। এখন Y-অক্ষ বরাবর ভারগুলোর মোমেন্টের গাণিতিক যোগফল ঐ অক্ষ বরাবর লম্বির মোমেন্টের সমান হবে।
(m1 g + m2 g + m3 g +.………+ mn g) = m1 gx1 + m2gx2+m3 gX3 +……..mn gxn
অসম অথবা সুষম বস্তুর ভারকেন্দ্র নিম্ন উপায়ে নির্ণয় করা যায় :
মনে করি একটি অসম ত্রিভুজাকৃতি পাতলা পাত ABC-এর ভারকেন্দ্র নির্ণয় করতে হবে। প্রথমে পাতটির যে কোন এক প্রান্ত, ধরা যাক, A-এ সুতা বেঁধে পাতটিকে ঝুলিয়ে আর একটি সুতায় একটি পাথরখণ্ড S বেঁধে ঐ একই প্রান্ত A হতে পাথরটিকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় [চিত্র ৭.১৩]।
পাত ও পাথর খন্ডটির স্থিরাবস্থায় A হতে সুতা বরাবর পাতের উপর দিয়ে একটি সরলরেখা AD টানা হয়। অনুরূপভাবে পাতটিকে পর পর B ও C হতে ঝুলিয়ে পাতটির উপর দিয়ে সুতা বরাবর যথাক্রমে সরলরেখা BE ও CF টানা হয়। তাহলে, অঙ্কিত AD, BE ও CF-এর ছেদবিন্দু G-ই পাতটির ভারকেন্দ্র। কারণ স্থিরাবস্থায় সুতার টানের বিপরীতে বস্তুর ওজন ক্রিয়া করে এবং সুতাটি বস্তুর ভারকেন্দ্র দিয়ে যাবে। এখানে পাথরখণ্ডটি যে সুতায় ঝুলে থাকে তাকে ওলন সুতা এবং অঙ্কিত সরলরেখা গুলোকে ওলন রেখা বলা হয়।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একক ভরের কোন বস্তু স্থাপন করলে তার উপর যে বল প্রযুক্ত হয়, তাকে ঐ ক্ষেত্রের দরুন ঐ বিন্দুর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলে। এটা সাধারণত মহাকর্ষীয় প্রাবল্য (Intensity)নামে পরিচিত। মনে করি M ভরের একটি বস্তু আছে। এই বস্তুর ভরকেন্দ্র হতে দূরে অবস্থিত কোন বিন্দুতে মহাকর্ষীয় প্রাবল্য নির্ণয় করতে হবে।
নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র হতে আমরা জানি, M ও m ভরের দুটি বস্তুর ভরকেন্দ্র পরস্পর হতে দূরে থাকলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বলের পরিমাণ =
এখন যদি m= 1 একক হয়, তবে
বল = = M ভর কর্তৃক একক ভরের উপর M ভর অভিমুখী প্রযুক্ত বল। এটাই মহাকর্ষীয় প্রাবল্য E,
অর্থাৎ মহাকর্ষীয় প্রাবল্য, (28)
উক্ত সমীকরণ হতে সহজেই বুঝা যায় যে, M যত বেশি হবে, প্রাবল্যও তত বাড়বে। আবার r যত বেশি হবে, প্রাবল্য তত কমবে।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে প্রাবল্য বিভিন্ন হবে।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে m ভরের একটি বস্তু রাখলে তার উপর ক্রিয়াশীল বল হবে,
যেহেতু বল একটি ভেক্টর রাশি, তাই মহাকর্ষীয় প্রাবল্য, একটি ভেক্টর রাশি। -এর দিক হবে -এর দিক বরাবর। অন্যভাবে বলা যায়, একক ভরের বস্তু যেদিকে বল লাভ করে -এর দিক সেদিকে হবে।
এম. কে. এস. ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে প্রাবল্যের একক নিউটন/কিলোগ্রাম (Nkg-1)।
একে সাধারণত V দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বলই কাজ করে থাকে। বাইরের কোন বল বা শক্তির প্রয়োজন হয় না। সুতরাং মহাকর্ষীয় বিভবকে ঋণ রাশি দ্বারা প্রকাশ করা হয় অর্থাৎ মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে বিভব ঋণাত্মক এটা একটি স্কেলার রাশি।
এম. কে. এস. বা এস. আই. পদ্ধতিতে এর একক জুল/কিলোগ্রাম (Jkg-1)।
আকর্ষণ বলের অভিমুখে সরণ হলে বিভব পার্থক্য ঋণাত্মক এবং আকর্ষণ বনের বিরুদ্ধে সরণ হলে বিভব পাৰ্থক্য ধনাত্মক হবে।
আমরা জানি, অসীম দূরত্ব হতে একক ভরের কোন বস্তুকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয়, তাকে উক্ত বিন্দুর মহাকর্ষীয় বিভব বলে।
এখন বিন্দু ভরের দরুন মহাকর্ষীয় বিভবের সাধারণ সমীকরণ বের করা যাক।
মনে করি, O বিন্দুতে M ভরের একটি বিন্দু ভর বস্তু অবস্থিত [চিত্র ৭-১৪]। O হতে দূরে P একটি বিন্দু। P বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বিভব বের করতে হবে।
P বিন্দুতে একক ভরের উপর O বিন্দু অভিমুখী প্রযুক্ত বল অর্থাৎ মহাকর্ষীয় প্রাবল্য = । এখন একক ভরকে সামান্য দূরত্ব dr নিয়ে যেতে কাজের পরিমাণ অর্থাৎ বিভব,
dv = বল x সরণ = প্রাবল্য x সরণ =
একক ভরকে অসীম দূরত্ব হতে P বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ অর্থাৎ P বিন্দুতে বিভব
বা,
বা,
এখানে ঋণচিহ্ন এই অর্থ প্রকাশ করে যে, বাহ্যিক কোন বল বা শক্তি দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়নি, মহাকর্ষীয় বলই কাজ সম্পন্ন করেছে।
মহাকর্ষীয় প্রাবল্য এবং মহাকর্ষীয় বিভবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে ধরি, A ও B মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত কাছাকাছি দুটি বিন্দু [চিত্র ৭.১৫]। মনে করি এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব । A বিন্দুর বিভব = VA এবং B বিন্দুর বিভব = VB। যেহেতু A ও B বিন্দু দুটি মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে কাছাকাছি অবস্থিত, সেহেতু বিন্দু দুটির মহাকর্ষীয় প্রাবল্য সমান ধরে নেয়া হয়। মনে করি এই প্রাবল্য = F
এখন, একক ভরের কোন বস্তুকে B বিন্দু হতে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ = প্রাবল্য × দূরত্ব
= F× AB = F×r
এটাই হল A বিন্দু এবং B বিন্দুর বিভব পার্থক্য অর্থাৎ (VA – VB)
F × AB=VA -VB
বা,
অর্থাৎ, দূরত্ব সাপেক্ষে বিভবের পরিবর্তনের হারকে প্রাবল্য বলে। ক্ষেত্রের অভিমুখে সরণ AB = dr হলে এবং A বিন্দুর বিভব V ও B বিন্দুর বিভব (V + dV) হলে, VA- VB =-dV
এটাই প্রাবল্য এবং বিভবের মধ্যে সম্পর্ক।
অতি প্রাচীনকাল হতে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে ডেনমার্কের জ্যোতির্বিদ টাইকোব্রে (Tycho-Brahe) মংগল গ্রহের গতিবিধি লক্ষ করেন এবং কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁর এ গবেষণা লব্ধ তথ্য এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণের সাহায্যে 1618 খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের অপর জ্যোতির্বিদ জন কেপলার (John Kepler) সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, গ্রহগুলো কোন এক বলের প্রভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে অবিরাম ঘুরছে। এই সম্পর্কে তিনি তিনটি সূত্র প্রদান করেন। তাঁর নাম অনুসারে এই তিনটি সূত্রকে কেপলার-এর গ্রহ সম্পৰ্কীয় গতিসূত্র (Kepler's laws of planetary motion) বলা হয়। সূত্র তিনটি নিম্নে আলোচিত হল ঃ
প্রতিটি গ্রহ সূর্যকে উপবৃত্তের নাভিতে বা ফোকাসে রেখে একটিউপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করছে।
গ্রহ এবং সূর্যের সংযোগকারী ব্যাসার্ধ রেখা সমান সময়ে সমান ক্ষেত্রফল অতিক্রম করে।
প্রতিটি গ্রহের পর্যায়কালের বর্গ সূর্য হতে তার গড় দূরত্বের ঘনফলের সমানুপাতিক।
এই সূত্র সূর্যের চারদিকে গ্রহের কক্ষপথের আকৃতি প্রকাশ করে। মনে করি S এবং একটি উপবৃত্তের দুটি নাভি। ধরি নাভিটি সূর্যের অবস্থিতি [চিত্র ৭.১৬]। কেপলারের প্রথম সূত্র অনুসারে যে কোন গ্রহ সূর্যকে s বিন্দুতে রেখে একটি উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে।
এই সূত্র কক্ষীয় বেগ এবং সূর্য ও গ্রহের মধ্যবর্তী দূরত্বের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। মনে করি কোন গ্রহ। সময়ে P অবস্থান হতে Q অবস্থানে আসে। যদি একই সময়ে ঐ গ্রহ M অবস্থান হতে R অবস্থানে আসে, তবে কেপলারের দ্বিতীয় সূত্র হতে পাই, PQS-এর ক্ষেত্রফল এবং MSR-এর ক্ষেত্রফল সমান হবে।
এই সূত্র’গ্রহের কক্ষপথের আকার এবং অতিক্রান্ত সময়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। মনে করি T গ্রহের পর্যায়কাল অর্থাৎ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে সময় লাগে তার মান T। যদি 2a পরাক্ষের দৈর্ঘ্য হয়, তবে কেপলারের তৃতীয় সূত্র হতে আমরা পাই,
যেহেতু 8 একটি ধ্রুব সংখ্যা, সেহেতু
উক্ত সমীকরণ হতে কেপলারের তৃতীয় সূত্রটিকে সামান্য পরিবর্তন করে নিম্নরূপে লিখা যায় -
প্রতিটি গ্রহের পর্যায়কালের বর্গ গ্রহের কক্ষপথের পরাক্ষের অর্ধেকের ঘন-এর সমানুপাতিক।
মহাবিজ্ঞানী নিউটন কেপলারের সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে মহাবিশ্বে যে কোন দুটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। সূর্যের চতুর্দিকে গ্রহগুলোর কক্ষপথ বৃত্তাকার গণ্য করে নিম্নলিখিত উপায়ে সহজে কেপলারের সূত্রগুলো হতে নিউটনের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।
ধরা যাক m ভরের একটি গ্রহ সূর্যের চতুর্দিকে ব্যাসার্ধের বৃত্তপথে সমগতিতে ঘুরছে। কিন্তু গ্রহের উপর সূর্যের দিকে কেন্দ্রমুখী বল প্রয়োগ ব্যতীত গ্রহের এই বৃত্তাকার গতি সম্ভব নয়।
প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমুখী বল
সূর্যের চতুর্দিকে গ্রহটির আবর্তন কাল T হলে,
কিন্তু কেপলারের তৃতীয় সূত্রানুসারে,
অর্থাৎ T2 = kr3, এখানে k একটি ধ্রুবক।
সুতরাং গ্রহের উপর সূর্যের আকর্ষণ বল, গ্রহের ভরের সমানুপাতিক এবং সূর্য হতে গ্রহের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। কিন্তু প্রত্যেক ক্লিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। কাজেই সমীকরণটিতে F-এর সাথে যেমন গ্রহের ভর m-এর সম্পর্ক আছে তদ্রূপ F-এ সূর্যের ভরেরও একই সম্পর্ক থাকবে। এজন্য -কে GM ধরা যায় ; এখানে G একটি ধ্রুবক এবং M সূর্যের ভর।
সূর্য ও গ্রহের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বল, (33)
এটাই নিউটনের মহাকর্ষীয় সমীকরণ। সুতরাং কেপলারের সূত্র হতে নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র প্রতিষ্ঠিত হল।
পৃথিবী যে বল দ্বারা কোন বস্তুকে টানে তা বস্তুর ভরের সমানুপাতিক। এই ভর মহাকর্ষীয় তর। তুলাদণ্ডের সাহায্যে এই ভর নির্ণয় করা হয়। অন্য কথায় বলা যায়— তুলাদণ্ডে মেপে আমরা যে ভর নির্ণয় করি, তাই মহাকর্ষীয় ভর।
কোন বস্তুতে ধ্রুবমানের F বল প্রয়োগ করলে যদি তার ত্বরণ a হয়, তা হলে কে তার জড় তর বলে। পরীক্ষায় দেখা যায় উভয় ভর একই।'
আমরা জানি মহাকর্ষীয় বল কেন্দ্রগ বলে সংরক্ষণশীল। তাই কোন একটি বস্তুকে উপরের দিকে নিক্ষেপ করলে তা আবার মাটিতে এসে পড়ে। কিন্তু কোন বস্তুকে যদি এমন বেগে উর্ধ্বে উৎক্ষেপ করা হয় যে তা পৃথিবীর অভিকর্ষীয় ক্ষেত্র অতিক্রম করে যায় তবে বস্তুটি আর কখনই পৃথিবীর পৃষ্ঠে ফিরে আসবে না। ন্যূনতম এই বেগকে মুক্তি বেগ বলে। অতএব কোন বস্তুকে ন্যূনতম যে বেগে ঊর্ধ্বে উৎক্ষেপ করলে তা আর পৃথিবী পৃষ্ঠে ফিরে আসে না তাকে মুক্তি বেগ বা পলায়ন বেগ বা নিষ্ক্রমণ বেগ বলে। একে VE দ্বারা সূচিত করা হয়।
মুক্তি বেগের সমীকরণ বের করতে গিয়ে ধরি উৎক্ষিপ্ত বস্তুর ভর m, পৃথিবীর ভর M, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R, পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্ব r, [চিত্র ৭.১৭] অতএব বস্তুর উপর অভিকর্ষ বল,
এখন বস্তুটি যদি অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে dr পরিমাণ উপরে উঠে, তবে কাজের পরিমাণ, dW = F.dr
সুতরাং অভিকর্ষীয় বল ছাড়াতে বস্তুটিকে মোট যে পরিমাণ কাজ করতে হবে, তার মান
বা,
অর্থাৎ,
মনে করি, বস্তুর উৎক্ষিপ্ত বেগ = VE । তা হলে তার প্রাথমিক গতিশক্তি
এই শক্তি ব্যয় করেই বস্তুটি অভিকর্ষীয় ক্ষেত্রের সীমানা ছাড়িয়ে যায় অর্থাৎ উপরোক্ত কাজ করবে।
:-
এটাই হল যুক্তি বেগের সমীকরণ। উপরোক্ত সমীকরণে m না থাকায় আমরা বলতে পারি যে, মুক্তি বেগ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। বস্তু ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, মুক্তি বেগ একই হবে।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যায়, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ,
R = 64 x 105m ও g = 9.80 ms-2
অতএব এক্ষেত্রে মুক্তি বেগ,
= 11.20Kms-1 = 7 মাইল/সে. (প্রায় )
= 25000 মাইল/ঘন্টা
সুতরাং কোন বস্তুকে যদি প্রতি ঘণ্টায় 25000 মাইল বেগে বা এর অপেক্ষা অধিক বেগে উৎক্ষেপ করা হয়, তবে তা আর ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে কোন বস্তুকে বেগে উপর দিকে নিক্ষেপ করলে পৃথিবীর আকর্ষণ বলের দ্বারা বস্তুটির বিভিন্ন পরিণতি হতে পারে। যথা ঃ
(১) যদি - হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 7.88 kms-1 অপেক্ষা কম হয়, তবে তা উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে এবং অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে আসবে [চিত্র ৭.১৮-এ (ক)]।
(২) যদি -হয় অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 7.88 kms-1 হয়, তবে বস্তুটি বৃত্তাকার পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে এবং চাঁদের মত উপগ্রহে পরিণত হবে [চিত্র ৭.১৮-এ (খ)।
৩) যদি কিন্তু
(৪) যদি v =VE হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ 11.2 kms-1 অর্থাৎ মুক্তি বেগের সমান হয়, তবে বস্তুটি একটি অধিবৃত্ত পথে পৃথিবী পৃষ্ঠ ছেড়ে যায় এবং তা পৃথিবীর আকর্ষণ ক্ষেত্র অতিক্রম করে বাইরে চলে যাবে [চিত্র ৭.১৮-এ (ঘ)]।
(৫) যদি V>VE হয়, অর্থাৎ উৎক্ষেপণ বেগ মুক্তি বেগ অপেক্ষা বেশি হয়, তবে বস্তু পরাবৃত্ত পথে পৃথিবী-পৃষ্ঠ ছেড়ে যায় এবং তা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না [চিত্র ৭.১৮-এ (ঙ)]।
আমরা জানি সূর্য ও তার চারদিকের গ্রহ, উপগ্রহ, উল্কা, নীহারিকা ইত্যাদি নিয়ে যে জগৎ তার নাম সৌরজগৎ। সৌরজগতের কেন্দ্রে থাকে সূর্য। আর গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে তার চারদিক প্রদক্ষিণ করছে। গ্রহগুলোকে কেন্দ্র করে উপগ্রহগুলো তাদের চারদিকে ঘুরছে। যেমন পৃথিবী একটি গ্রহ। এটি সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। চন্দ্র পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। চন্দ্র পৃথিবীর চারদিক প্রদক্ষিণ করছে।
যে সব বস্তু বা জ্যোতিষ্ক গ্রহের চারদিকে ঘোরে, তাদেরকে উপগ্রহ বলে। যে সব উপগ্রহ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট তাদেরকে স্বাভাবিক উপগ্রহ বলে। যেমন চন্দ্র প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অতএব চন্দ্র বা চাঁদ পৃথিবীর একটি স্বাভাবিক উপগ্রহ। তেমনি অন্যান্য গ্রহগুলোর ও স্বাভাবিক উপগ্রহ রয়েছে।
আমরা জানি সৌরজগৎ নামে একটি জগৎ রয়েছে যার কেন্দ্রে থাকে সূর্য। সূর্য হতে ছিটকে আসা কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম গ্রহ (planet)। পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ। পুনঃ, গ্রহ হতে ছিটকে আসা কতকগুলো জ্যোতিষ্ক গ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম উপগ্রহ (satellite)। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ যা প্রায় ৩০ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষের মনে কৌতূহল জাগছে কি করে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এই প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন অভিকর্ষের দরুন চাঁদের উপর পৃথিবীর কেন্দ্রমুখী বল এর কারণ। এই কেন্দ্রমুখী বল যদি না থাকত, তাহলে চাঁদ মহাশূন্যে মিলিয়ে যেত। পৃথিবীর চারদিকে চাদের প্রদক্ষিণের দরুন সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বল পৃথিবী কর্তৃক প্রযুক্ত কেন্দ্রমুখী বলের সমান ও বিপরীত হওয়ায় চাঁদ সোজা না গিয়ে পৃথিবীর চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরছে। এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মানুষ মহাশূন্যে পাড়ি দেয়ার জন্যে যে উপগ্রহ তৈরি করেছে, তার নাম কৃত্রিম উপগ্রহ।
1957 সালের 4th অক্টোবর রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম মহাশূন্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠান। এর নাম স্পুটনিক-1। সে বছরেই আরো একটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠান হয়। এর নাম স্পুটনিক-2। এই সময় আমেরিকার বিজ্ঞানীরা পেছনে ছিলেন না। তাঁরাও 1958 সালে মহাশূন্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেন। এর নাম এক্সপ্লোরার-1। এমনিভাবে মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়ে পৃথিবী তথা সৌরজগতের নানা রকম রহস্য উদঘাটনের কাজ চলছে। রাশিয়ার বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক-1 কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে সর্বপ্রথম মহাশূন্যে বিচরণ করেন।
পরীক্ষার সাহায্য দেখা গেছে যে কোন একটি বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় 930 km উপরে তুলে 8:05 kms-1 হতে 11*1 kms-1 বেগে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করলে তা পৃথিবীর একটি কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে চাঁদের মত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। কিন্তু কোন বস্তুকে এত উপরে তুলে এত বেশি বেগ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ বায়ুস্তরের সাথে এর ঘর্ষণে এত অধিক তাপ উৎপন্ন হবে যে কৃত্রিম উপগ্রহটি পুড়ে ভস্মীভূত হবে। তাই বায়ুতে এত বেশি বেগ না দিয়ে বায়ুস্তর অতিক্রম করার পর কৃত্রিম উপগ্রহে এত বেশি বেগ প্রদান করা হয় এবং তা প্রদান করা হয় একটি রকেটের সাহায্যে তিনটি ধাপে। কৃত্রিম উপগ্রহটি বসানো হয় রকেটের নাকের ডগায় এবং জ্বালানি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসানো হয় রকেটের ভেতরে। ধাপগুলো নিম্নরূপ :
সবচেয়ে নিচু স্তুরের রকেটটি সর্বপ্রথমে কাজ শুরু করে। এটি উপগ্রহ ও অপর দুটি স্তরের রকেটসহ খানিকটা খাড়া উপরে উঠে আস্তে আস্তে বাঁক নিতে থাকে। এই ধাপ প্রয়োজনীয় বেগের অংশ যোগানের পর খসে পড়ে। এই সময় দ্বিতীয় ধাপ কাজ শুরু করে এবং এই ধাপটি উপগ্রহটির বেগের প্রায় অংশ যোগানোর পর খসে পড়ে। তার পর শুরু হয় তৃতীয় ধাপের কাজ। এই ধাপটি উপগ্রহটিতে প্রয়োজনীয় বেগ প্রদান করে নিজে খসে পড়ে। উপগ্রহটি তখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে।
মনে করি m ভরের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে h উচ্চতায় অবস্থান করে v বেগে বৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করছে। এখানে উপগ্রহটির উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল = উপগ্রহটির ঘূর্ণনের জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমূখী বল।
মনে করি পৃথিবীর ভর M এবং এর ব্যাসার্ধ R।
উপগ্রহটির উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল
এটি পৃথিবীর কেন্দ্রাভিমুখী ক্রিয়া করছে। পুনঃ, উপগ্রহটির ঘূর্ণনের জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্ৰমুখী বল
গতির সাম্যাবস্থা হতে পাই
বা,
:-
এটিই হল h উচ্চতায় উপগ্রহটির প্রদক্ষিণ বেগ ।
উল্লেখ্য কক্ষপথের ব্যাসার্ধ কম হলে বেগ কম হবে। শুধু তাই নয় সমীকরণে m না থাকায় উপগ্রহটির বেগ এর ভরের উপর নির্ভর করে না।
মনে করি কৃত্রিম উপগ্রহটির আবর্তন বা পর্যায়কাল = T, যদি উপগ্রহটির কৌণিক বেগ হয়, তবে
বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ
বা,
বা,
বা,
উক্ত সমীকরণে v এর মান বসিয়ে পাই
বা,
এটিই হল কৃত্রিম উপগ্রহের আবর্তন কালের রাশিমালা।
মনে করি পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতা = h সমীকরণ (40)-এর উভয় পার্শ্বকে বর্গ করে পাই
বা,
এটিই হল কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতার রাশিমালা এবং আবর্তনকান ও উচ্চতার মধ্যে সম্পর্ক।
আমরা জানি পৃথিবী 24 ঘণ্টায় তার অক্ষের চারদিকে একবার ঘুরে আসে। এর নাম আহ্নিক গতি যার ফলে দিবা-রাত্র হয়। কোন কৃত্রিম গ্রহের আবর্তন কাল এবং নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর আবর্তন কাল সমান হলে পৃথিবী পৃষ্ঠের একজন পর্যবেক্ষকের কাছে একে সব সময়ই স্থিতিশীল মনে হবে। পৃথিবীর যে স্থানের খাড়া উপর থেকে একে বৃত্তাকার কক্ষপথে স্থাপন করা হয় এটি পৃথিবীর ঐ স্থানের উপরই সব সময় স্থিতিশীল আছে বলে মনে হবে। এর নামই ভূ-স্থির উপগ্রহ এবং যে কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থিতিশীল থাকে তাকে পার্কিং (parking) কক্ষপথ বলে।
মনে করি পৃথিবীর কেন্দ্রের সাথে এককেন্দ্রিক ভাবে নিরক্ষতলে (In the plane of equator) m ভরের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। উপগ্রহের কক্ষপথের ব্যাসার্ধ এবং কক্ষপথে উপগ্রহের গতিবেগ এর উপর কেন্দ্রমুখী বা কেন্দ্রবিমুখী বল (42)
পুনঃ, পৃথিবীর ভর M হলে মহাকর্ষীয় বল
F = F'
বা,
কিন্তু অভিকর্ষীয় ত্বরণ
বা,
যদি কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষপথ বরাবর আবর্তন কাল T হয়, তবে
এখন কৃত্রিম উপগ্রহের আবর্তন কাল এবং পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারদিকের আবর্তন কাল সমান হলে পৃথিবী থেকে উপগ্রহটিকে একই স্থানে স্থির দেখা যায়। এর নাম ভূ-স্থির উপগ্রহ এবং ঐ কক্ষপথের নাম পার্কিং কক্ষপথ । উল্লেখ্য, পার্কিং কক্ষপথে রিলে উপগ্রহ স্থাপন করে পৃথিবীর এক স্থানের সংবাদ, খেলাধূলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি পৃথিবীর অন্য স্থানে ধারাবাহিকভাবে দেখানো যায়।
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে কৃত্রিম উপগ্রহের বহুল ব্যবহার রয়েছে। ব্যবহারগুলো নিচে উল্লেখ করা হল ঃ
(১) পৃথিবীর আকার ও আকৃতি সম্পর্কিত ভূ-জরিপ করা যায়।
(২) এর সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের এলাকা সম্পর্কে বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করা যায়।
(৩) উচ্চ বায়ুমণ্ডলের চাপ, তাপমাত্রা বা গঠন নির্ণয় করা যায়।
(৪) ঊর্ধ্বাকাশের আয়নমণ্ডল, কসমিক বিকিরণ, চার্জিত কণিকার ভ্যান আসেল বেষ্টনী, সৌর বিকিরণের প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
(৫) আবহাওয়া সম্পর্কীয় নিরীক্ষণ ও পূর্বাভাস পাওয়া যায় ।
(৬) বহির্বিশ্বে রনজেন রশ্মি, গামারশ্মি ইত্যাদির উৎস সংক্রান্ত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যান্য গবেষণা চালানো যায়।
(৭) প্রতিরক্ষামূলক পাহারা ও বিভিন্ন সামরিক ব্যবস্থায় এটি ব্যবহৃত হয়।
(৮) আন্তমহাদেশীয় যোগাযোগে এটি ব্যবহার করা হয়।
(৯) পৃথিবীর যে-কোন দেশে অনুষ্ঠিত খেলাধূলা বা যে-কোন অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখানো হয়।
(১০) কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়।
আমরা জানি, ওজন, W = mg। অর্থাৎ, ভর x অভিকর্ষ ত্বরণের গুণফল হল ওজন। বস্তুর ভর নির্দিষ্ট। মানুষের ভরও নির্দিষ্ট। কিন্তু g-এর মান তারতম্য হলে ওজন কম-বেশি হয়।
মহাশূন্যচারীরা খেয়াযানে পৃথিবী থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার বৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে। এই বৃত্তাকার গতির জন্য পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ঐ উচ্চতায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের সমান মানের একটি ত্বরণ সৃষ্টি হয়। ফলে এই মহাশূন্য যানের' দেওয়াল বা পাটাতনের সাপেক্ষে মহাশূন্যচারীর ত্বরণ (g - g) = 0 হয়। তাই মহাশূন্যচারীর
ওজন W = m x 0 = 0।